ছোটগল্প
হাফ প্যাডেল
বিপ্লব নসিপুরী
তন্ময় বলে “আমার পিকলুর মতো রডে বোতল দেওয়া সাইকেল চাইই চাই।” বছর দশের ছেলের এমন জেদের কথা শুনে মহাফাঁপড়ে পড়ে গেল অলোক। তবুও সে তাঁর ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল “আজ কাজ থেকে ফেরার পথে মালিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাল সাইকেল কিনে আনব।”
ছেলে ঘুমাচ্ছে কিনা ভালো করে দেখে নিল শিলা। তারপর স্বামীর কাছে গিয়ে বললে “কী গো টাকা পেলে? আজ কিন্তু সারাদিন মন খারাপ করে বসেছিল, বারবার বলছিল তুমি কখন আসবে?” অলোক মৃদুস্বরে বললে “মালিক তো এক হাজারের বেশি দিতে পারব না বলল। এদিকে আমি খোঁজ নিয়েছি, ও যে-রকম বলছে তাতে ছয় হাজারের কমে হবে না।”
—তার মানে আরও পাঁচ হাজার। শোনো না, আমার কাছে এই কানের দুল জোড়া পড়ে আছে। কাল তুমি এটা বিক্রি করে ওর জন্যে সাইকেল আনিয়ো। জানো ওর বন্ধুরা সবাই ঐ সাইকেল চড়ে বেড়ায়। দেখে ওর খুব কষ্ট হয়।
—তোমার তো ঐ একটাই সোনা তাও বিক্রি করবে।
—ছেলেটাই তো বড়ো সোনা গো। তার তুলনায় এটা কিছুই নয়।
—(সকালে উঠে তন্ময় বললে) কালরাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি বাবা, শুনবে?
অলোক উদাস হয়ে ভাবছিল সে কী করে তার স্ত্রীর শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করবে। বিয়ের পর একটা গয়নাও সে কিনে দিতে পারেনি। ছেলের কথায় সম্বিত পেয়ে অলোক বলল “হ্যাঁ হ্যাঁ, বল, আমি শুনছি।”
—জানো তো বাবা, স্বপ্নে দেখলাম আমি হিরো সাইকেল চড়ে এমাথা ওমাথা ঘুরে বেড়াচ্ছি। ঘুরতে ঘুরতে অনেক দূরে চলে গেছি। পথঘাট চিনতে পারছিলাম না। এদিকে আঁধার নেমে এল। আমার ভীষণ ভয় করতে লাগল। কাঁদতে লাগলাম। তখনই ঘুম ভেঙে গেল। বাবা আমার ওরকম সাইকেল চাই না। আমি তোমার সাইকেলটাই হাফ প্যাডেল করে চালাব। যাতে বেশি দূরে চলে যেতে না পারি। আর তোমাদেরকেও হারিয়ে যাতে না ফেলি।
অলোক আর শিলা তন্ময়কে বুকে জড়িয়ে ধরল। তাদের খুশির অশ্রুবারি কিরণ স্পর্শে মুক্তোন্যায় গাল বেয়ে নামতে লাগল।
_____________________
No comments:
Post a Comment