Popular Posts

Showing posts with label আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস. Show all posts
Showing posts with label আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস. Show all posts

Friday, April 11, 2025

(P-26) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : এপ্রিল, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ০৪.
মাসিক সংখ্যা : ২৯ তম (হো সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

ফাগুনের ছোঁয়ায় 

ঋতম পাল


আকাশে আজ রঙের নেশা, 

ঋতুরাজের ঘটলো বুঝি আগমন;

কৃষ্ণচূড়ার ওই কোমল আভায়, 

মিললো দুটি প্রেমিক মন। 


চুপ কথার শহরে এসেছে বসন্ত, 

রঙে রঙে উঠলো সেজে তিলোত্তমা;

কোকিলের কুহুতানে মুগ্ধ চারিপাশ, 

ফাগুনের ছোঁয়ায় বিরহ যে আর সয় না।

_____________________


Thursday, March 27, 2025

(P-25) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২৫.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

সাঁকো 

প্রতীক মিত্র


অন্তরঙ্গতার সাঁকোটা 

শুধুই মনে হয় 

এই বুঝি ভেঙে ধসে পড়বে 

উদাসীন নীরব সময়ের স্রোতে।


তারপর আখ্যান আনে সংশয়

প্রতিশ্রুতি আঁতকে উঠে কলরবে

চিনিয়ে দেয় সীমাবদ্ধতা 

একে অন্যের আদতে।


অগত্যা সাঁকোটা ঝুলতে থাকে, 

ভেঙে পড়ে না।

প্রত্যাশাও সেই সাঁকোর ওপর দিয়ে 

খুঁজে পায় ওড়ার বাহানা।

_____________________


(P-24) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২৪.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

সে ‘তুমি’ 

সত্য প্রকাশ সাঁতরা


অবসন্ন শরীর খারাপে

আমি যে প্রলাপ বকি, সে ‘তুমি’।

দীর্ঘ ব্যস্ততার শেষে বাড়ি ফেরার মুহূর্তে

আমি যে দীর্ঘশ্বাস ফেলি, সে ‘তুমি’।

মায়ের হাতের যন্তমাখা স্পর্শে অথবা

প্রেমিকার চোখের স্নিগ্ধতায়,

আমার যে আবেগ ঝড়ে পরে, সে ‘তুমি’।

খাদ্যের সন্ধানে পথশিশুটির কিংবা

যে মাধ্যম ধরে ষ্টেশনের বৃদ্ধ ভিখারিটার হাত,

আমাদের দিকে এগিয়ে আসে, সে ‘তুমি’।

ঝুলন্ত দেহটির যে গোঙানি, সে ‘তুমি’।

রাজপথে চিৎকারে যে শ্লোগান ওঠে, সে ‘তুমি’।

পৈশাচিক নৃশংসতায় নিরীহ মেয়েটির

অশ্রুসিক্ত যে অসহায় আর্তনাদ, সে ‘তুমি’।


আমার গর্ব-আমার অহংকার, সে ‘তুমি’ 

সকলের সেরা আমার মাতৃভাষা, সে ‘তুমি’

আমার বৃষ্টিভেজা সকাল, সে ‘তুমি’ 

ধুলোমাখা মায়ের ভাষা, সে ‘তুমি’

_____________________


(P-23) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২৩.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

ভিত্তিহীনে 

পরমেশ্বর গাইন


চেনা বাতাস, বিরহ আবেশে মুক্তাঙ্গনে 

ভেঙেছে আত্মবিশ্বাস

সত্য স্রোতের সন্ধিক্ষণে। 


উড়ে এলো “মিথ্যে” সগৌরবে

অন্দরমহলে লক্ষ্মীপুরের আঁচল তলে

অস্পষ্ট অবয়বে। 


রক্তবীজে দা’ঠাকুরের বৈঠকখানা

রাম রাবণে ভক্ত ভগবানে

দ্বন্দ্বে ভরা নরক যাতনা।


স্বর্গ সুখের পরম্পরায়—

নতুন আলো, কখন যেন পথ হারালো

সেই বাতাসের লোভ-লালসায়।

_____________________


(P-22) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২২.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

রাতের গল্প 

মাখনলাল প্রধান


নিশুতি রাতের গল্প। 

বাতাসের জোনাকি বুনন শাড়ি। 

ভাষান্তরে শীতল মায়াবী কণ্ঠস্বর। 

চিরকাল সড়ক পথে চোখ জ্বেলে ছুটে যায় লরি।


মিছিলে হাঁটা মানুষের গল্প। 

স্বপ্নে ভেজানো রাতের কারিগরি। 

স্বপ্নে ভেজানো পোড়া রুটি অমৃত। 

অসুখের মা অক্লেশে হেঁটে যায়।


ঋতুর জোয়ার ভাসিয়ে দেয় হৃদয়।  

চোরাবালি মূলধন হতভাগ‍্যের। 

আকাশের পিঠে চরে গাই গোরু। 

কালো মেঘ তাদের নহবত সামলায়।


রাতেরা শুধু গল্প বলে। 

গল্পবাজ রাত এত বানাতে পারে। 

শুধু মানুষের কোনো গল্প নেই। 

তারা রাতের কাঙাল।

_____________________


(P-21) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২১.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

কবিতার রক্ত 

কাজল মৈত্র


একটা পৃষ্ঠা আমার জন্য রেখো

যাতে লেখা থাকবে ভালোবাসার অভাব বোধ 

অদূরে অনুপ্রবেশকারী নাবিকের মত 

আমি পড়ে আছি অগণিত দুঃখ ছোপ নিয়ে 

প্রকৃতির চন্দ্রমালা মুখস্তের কালে 

কেন যেন হারিয়ে যায় 

প্রেম ভালোবাসা অতঃপর 

পাপ পুণ্যের দোলনায় বসিয়ে 

নিজেকে মেপে চলি ভালোবাসার লাভা স্রোতে 

এভাবেই শতাব্দী পেরিয়ে 

কোন দৈব আলোয় নক্ষত্র দোষে 

লাল রঙে ঝরে পরে কবিতার রক্ত।

_____________________


(P-20) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২০.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

আকাশ ভীষণ কালো 

মোঃআরিফুজ্জামান সোহাগ


আকাশ ভীষণ কালো 

সূর্য দেয় আলো! 

জোনাকিরা খেলা করে 

বাঁশ ঝাড়ে শত।


বনে আছে বাঘ

নদীতে থাকে মাছ! 

শিয়াল মামা শিকার করতে 

পার করে দেয় রাত।


গোলা ভরা ধান আর 

কৃষকের মুখে হাসি!

আদি কালের কৃষি ছিল

সোনার চাইতে খাটি।

_____________________


(P-19) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৯.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

মহাকাশ ও মানুষ 

আনন্দ গোপাল গরাই


মানুষ একদিন করবে চাঁদে গিয়ে বাস 

উপনিবেশ গড়তে পারে চাঁদের মাটিতে 

অসম্ভব নয় কিছু বিজ্ঞানের কাছে 

মানুষের বাসস্থান হবে মহাকাশ।


সুদূর পৃথিবী থেকে তারাদের দেশে 

হয়তো পৌঁছে যাবে কোনো একদিন 

স্বপ্নে নয় সশরীরে চলে যাবে সেথা

থাকবে ওদের সাথে মহাকাশে ভেসে।


আসবে কি শুভবোধ মানুষের মনে

মুছে যাবে চিরতরে হিংসা দ্বেষ গ্লানি

ভরবে অন্তর তার আলোয় আলোয়

আড়ি হবে চিরকাল অন্যায়ের সনে?


অবিচার আবিলতা যদি হয় ক্ষয়

দিই যদি মানুষের ন্যায্য অধিকার 

সম্প্রীতির রামধনু রঙ ছড়ায় যদি

তবেই সার্থক হবে মহাকাশ জয়।

_____________________


(P-18) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৮.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

বিশ্ব কবিতা দিবসে 

উৎপলেন্দু দাস


কোকিল ডাকা মন উদাস করা চৈতি বাতাসে 

ভেসে আসে বিশ্ব কবিতা দিবস

কাকের বাসায় উঁকি দেয় আগুন রঙা পলাশ

পাতা ঝরিয়ে হাসি মুখে জড়িয়ে উষ্ণ আবেগে বলে  

চল যাই শীতল হতে আমন্ড বাগানে

চলছে চোখ জুড়ানো গোলাপী সাদা প্রেমের মহোৎসব!   


শুনে মুহূর্তে হারাই আমি মন মাতানো ঘ্রাণে

ছুটে যাই আয়নার কাছে প্রেমের রঙে সেজে নিতে

দেখি মলিন অস্পষ্ট প্রায় অচেনা মুখাবয়ব, 

প্রাণপণে বার বার কাঁচ মুছে ভেসে চোখের জলে 

দেখি সেই বিবর্ণ আমি, আয়না হেসে বলে 

আগে স্নান সেরে ধুয়ে নাও জমানো ময়লা যত সব।

_____________________


(P-17) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৭.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

খামখেয়ালি শহর 

সুবীর কুমার ঘোষ


রাস্তায় হাঁটছে এক জোড়া জুতো,

মালিক কে তার? কেউ জানে না।

হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে উদভ্রান্ত চিঠি,

কি লেখা আছে? কেউ পড়ে না।


একটা ল্যাম্পপোস্ট একা দাঁড়িয়ে,

শহরের গল্পরা ফিসফিস করে।

পার্কের বেঞ্চিতে বসে থাকা ছায়া,

অন্য এক ছায়াকে খুঁজে মরে।


ঘড়ির কাঁটা বেয়াড়া হয়ে,

সময়কে ছাড়িয়ে ছুটতে চায়।

চাঁদটা আজ গলির ধারে,

শুকতারার প্রেমে একতারা হাতে বাউল!


গাড়ির হেডলাইটে, বৃষ্টির তীব্র ছাঁট,

রাতের শহরে মায়াবী আলোর খেলা 

অবাক মানুষ, অবাক এই শহর,

সব যেন কেমন অদ্ভুত লাগে।

_____________________


(P-16) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৬.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

বসন্ত উৎসব 

অজিত কুমার জানা


ঘুম ভাঙতেই কর্ণ পর্দায় উৎসব, 

একগুচ্ছ কুহু সুগন্ধি ফুল।

সূচিপত্রে বসন্তের নতুন সংস্করণ, 

মোবাইল থেকে সিম বেরিয়ে, 

একই টেবিলে বসে মুখোমুখি,

উভয়ের কন্ঠস্বরে মিষ্টান্ন ভান্ডার। 


দিন ভোরের দরজা খুলে,

সিঁথিতে লাল পলাশের বাড়ি।

পরনে রাঙা রোদের সকাল, 

প্রকৃতির ছবি আঁকা ইস্কুলে, 

নব পল্লবের মলয় দখিনা, 

বসন্ত উৎসব মঞ্চ বানায়।

_____________________


(P-15) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৫.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

খনন 

ইলা সূত্রধর


অনেকটা সময় পেরিয়ে এসেছি 

অবেলায় বসে জীবনকে করেছি খনন 

প্রত্নভূমির ভিতর প্রস্তরখণ্ড শুধু 

টিং-টং আওয়াজে শব্দ দূষণ।


ফিরে যাই কবেকার জীবাশ্মের কাছে

নেড়েচেড়ে দেখি স্মৃতির অবয়ব

অজস্র সমুদ্র ঢেউ, হৃদস্পন্দনের মতো 

ছলাকলা করে, তীরে ছলাৎ ছলাৎ


নির্জন গহ্বরে সহস্র কাঁটার আড়ালে 

আজও লুকিয়ে আছে এক ব্রহ্মকমল

প্ররোচক শব্দ এসে ফণা তুলে দেয়

ছোবলের নীল বিষে ফাঁদ পাতা থাকে


অভিঘাতে অসহ্য কুঁকড়ে ওঠা কলমে 

অক্ষর বুনে কিছু সংলাপ লিখি, 

শুকনো পাতার খসখসে অন্ধ খোঁজে পথ 

নাইবা হলো এসব উল্লেখিত পান্ডুলিপি!


ভাবনার শুদ্ধতায় এসো, অনির্বাণ!

এই যাত্রাপথ চন্দ্রালোক হবে

খুনের গভীরে খুনি যেভাবে জাগে

শতদল পাঁপড়ি মেলে উন্মোচিত হোক!

_____________________


(P-14) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৪.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

আমরা 

লালন চাঁদ (হামিদুল ইসলাম)


এক একটি আশা ভেঙে যায় 

দুচোখ ঘোলাটে 

মলাটের নীচে জীর্ণ পৃথিবী 

হিংসা ঘৃণা আর বিদ্বেষ 


এখন সবাই ধর্মের বর্ম পরে আছে 

একটু ফুরসৎ পেলেই 

রক্তাক্ত হবে কারো না কারো ভবিষৎ 


হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি ভাঙা সাঁকো 

পার হতে পারি না 

এপার অশান্ত 

ওপার অশান্ত 

কোন পাড়ে গিয়ে দাঁড়াবো ঠিকানা নেই 


তবু বিপদ নিয়ে হাঁটি 

ঈশ্বর ঈশ্বর করি 

বিপদ কাটে না কোনোমতেই 

কে শোনে কার কথা 

উন্মত্ত সবাই 


চৈত্র মাস 

হঠাৎ বান ডাকে 

ধর্মান্ধরা শুকনো নদীতে ভেসে যায়

_____________________


(P-13) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৩.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

কেমন আছ তুমি 

খ্যাতিশ্বর আইমিক


দীর্ঘ ত্রিশটি বছরের যে কটা দিন

সামনাসামনি সাক্ষাৎ তোমার আমার

প্রতিবারই জানতে চেয়েছ— 

“কেমন আছ তুমি”


প্রেমিকা হয়ে মুখ ফুটে জানালে না—

“আমি তো তোমারই”

ভালোবাসা ছড়িয়ে ভরসা দিলে না—

“ভেঙে পড়ো না, আছি তো সবসময়”


বসন্তের রঙিন ছোঁয়া লাগিয়ে

এখনও অবধি জানালে না—

“শুধু তোমাকেই চাই,

রণে বনে জলে ঝড়ে সব জায়গায়”


উত্তর খুঁজে চলেছি তোমার প্রশ্নের, 

জিজ্ঞাসাটা কি অবচেতন মনে 

দোদুল্যমান লুক্কায়িত ব্যর্থতার 

নাকি লোক দেখানো সৌজন্যতার?


প্রতিবারই মুখ ফুটে বলতে চেয়েছি

অনেক কিছুই, পারি না কিছুই বলতে

বদলে হাস্যমাখা আমার সেই একই উত্তর

“বিন্দাস আছি, নিজের মতো, সবসময়”

_____________________


(P-12) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১২.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

তুমি চোখ তুলে তাকালে… 

গোবিন্দ মোদক


তুমি চোখ তুলে তাকালে 

একটা উদাসী ভোর এসে দাঁড়ায় পলাশের উঠোনে, 

সকালের জনহীন রাস্তা এসে শেষ হয় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে,

মৌমাছিদের ছন্দ-নাচে বিমোহিত মুকুল সুবাস ছড়ায়—

আর ফাগুনের কপোত-কপোতী অমোঘ আকর্ষণে 

উপহার দেয় আরও আরও ভারী প্রেম!


তুমি ভ্র-ভঙ্গি করলে 

তীর্যক একটা রোদের রেখা ছুঁয়ে যায় বসন্তবেলা—

যার উদোম শরীরে কোন শোকগাথা লেখা নেই; 

বরং শিমুলের রাঙা আহ্বান আর ঝরে যাওয়ার মধ্যে 

জেগে ওঠে হোলির মহোৎসব,

পাতা-হীন ডালে ডালে জাগে কিশলয়!


তুমি ইশারা করলে 

একরাশ মুগ্ধতা ঝরে পড়ে সূর্যাস্তের প্রায়ান্ধকারে, 

নিশ্চিত রাত্রি নামার আগে 

কে যেন ফিসফিস করে বলে যায়—

সব ঠিকঠাকই আছে, হারায়নি-কো কিছুই, 

শুধু সঠিক সময়ে বিরহী-বিকেলকে ছুঁয়ে যাওয়ার অপেক্ষা...।


তুমি চোখ তুলে তাকালে...

_____________________


(P-11) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১১.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

হৃদগোলাপের পাপড়ি 

তীর্থঙ্কর সুমিত


কত সবুজ...

মাঠে মাঠে কত কথা

কড়াইশুঁটির অনন্ত বিকেল

আর তুমি—

এখন অনেকটা নতুন হয়ে গেছো।

শহুরে আদব কায়দায় জল ভরে নাও

মননে এখন উপন্যাস

কবিতা ঘুমিয়ে পড়েছে।

জাগাওনি তুমি

তোমার নরম ঠোঁটের চুম্বন আঁকোনি।

অভিমানী কবিতা এখন হেঁটে চলছে

সবুজ থেকে চির সবুজের পথে

প্রশস্ত পথ, ধানক্ষেত সবই বদলেছে

তবুও কোথায় যেন একটা গ্রাম, গোধূলির বিকেল 

সন্ধ্যের হ্যারিকেনে পুড়ে যায় হৃদগোলাপের পাপড়ি।

_____________________


(P-10) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১০.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছড়া-কবিতা  

অতৃপ্ত বাসনা 

মহা রফিক শেখ


কখনো দেখতে ইচ্ছে হলে

আমায় ডেকো, 

আমারও ইচ্ছে হয়–

তোমাকে দেখার।

অন্তত একবারও...


কখনো কিছু বলতে চাইলে

আমায় বোলো,

আমারও ইচ্ছে হয়–

কিছু বলার।

যে কথা হয়নি বলা...


কখনো কিছু শোনাতে চাইলে 

আমায় শুনিও।

আমারও ইচ্ছে হয়–

কিছু শোনার।

যা আগেই শোনা উচিত ছিল…

_____________________


(P-09) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ০৯.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছোটগল্প

রহস্যময় মহিলা 

আধৃতি আইমিক


        চাকরি সূত্রে আমার বাবা তখন মুর্শিদাবাদের কোনো এক ব্লকের বিডিও অফিসার। অবশ্য এইখানে বাবার খুব কম দিনই পোস্টিং ছিল। স্কুলের গণ্ডি তখনও পেরোইনি। পুরনো বন্ধুদের ছেড়ে আসার কষ্ট প্রতিবারই ঘটত। 

       জানেন প্রথম রাতেই আমাদের বাংলোয় অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটেছিল। খুব ছোটবেলার ঘটনা, তাই অনেক কিছুই ভুলে গেছি। তবু সেদিনের সেই অদ্ভুত ঘটনা স্মরণে আনছি। রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাব, হঠাৎ ছাদের পাটাতন থেকে শব্দ, ঠাস-ঠাস! কেউ যেন কাউকে ঘোড়ার চাবুক মারছে। হঠাৎ একটা মহিলার আর্তচিৎকার—এমন হৃদয় বিদারক রক্ত হিম করা কান্না, যা শুনে আমার শরীর শিউরে উঠল। শুধু আমি নই, বাড়ির সবাই সবটাই শুনেছে। মা, বাবা, আমার মেজো বোন—সবাই চমকে উঠে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি। বাইরে আটজন গার্ড পাহারা দিচ্ছে। বাবা তাদের ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, “এটা কিসের শব্দ?” গার্ডরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলল, “স্যার, আমরা কেউ কিছু জানি না। এমন শব্দ আগেও শুনেছি, কিন্তু কিছু পাইনি।” বাবা সাহসী মানুষ। তাই দুজন গার্ডকে ছাদে পাঠালেন দেখতে। কিন্তু তারাও ফিরে এসে বলল, “কিছুই নেই। শুধু পাটাতনে কিছু দাগ ছাড়া কোথাও কিছু পাওয়া যায়নি।” শব্দটা কিন্তু থামল না। রাত গভীর হতেই আরও ভয়ঙ্কর কিছু শুরু হলো।  

         রাত তখন দুটোর কাছাকাছি। বিছানায় শুয়ে আছি, হঠাৎ মনে হলো কার যেন নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ের কাছে। ঠান্ডা, ভারী নিঃশ্বাস। গলায় যেন কার ঠান্ডা হাতের স্পর্শ। আমার মেজো বোন, যে চিরকালই ভীতু, ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমার ঘরে এসে বলল, “দিদি, আমি তোর সাথে ঘুমাব।” ভয় না দেখিয়ে বললাম, “ঠিক আছে, তুই ভয় পাস না, আয় দুই বোনে মিলে শিবের মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করে ঘুমিয়ে পড়ি।”

ওম ত্রয়ম্বকং যজামহে সুগন্ধিংপষ্টিবর্দ্ধনম্।

উর্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ।।

          কিন্তু এখানেই শেষ নয়। প্রায় প্রতি রাতেই একই ঘটনা। ছাদে চাবুকের শব্দ, মহিলার কান্না। কখনো গলায় ঠান্ডা হাত, কখনো নিঃশ্বাসের শব্দ। এক রাতে তো ঘটল এক ভয়ঙ্কর কাণ্ড। শুয়ে আছি, হঠাৎ মনে হলো কেউ যেন আমার গলার চিকন হাড়টা খুলে নিল। ভয়ে চোখ বন্ধ করে পড়ে আছি। সকালে উঠে দেখি, কার্পেটের ওপর আমার আর মেজো বোনের গলার হাড় দুটো পড়ে আছে! এত অল্প বয়সে এমন অস্বাভাবিক ঘটনা—ভয়ে বুক কাঁপছিল। মাকে সব খুলে বললাম। মা চুপ করে শুনে বললেন, “দেখি কী করা যায়।”  

          কয়েক মাস এভাবে কাটল। শীতকালে একদিন নিম্নচাপের প্রভাবে সন্ধ্যা থেকে টিপটিপ করে বৃষ্টি আর ঠান্ডা বাতাস বইছিল। এরইমধ্যে রাত দশটার পর হঠাৎ করেই মা, মেজো বোন অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাড়িতে আমি একা জেগে। একটা রহস্য গল্পের বই নিয়ে পড়ছি, কান সজাগ। হঠাৎ মনে হলো মা ডাকছেন। দৌড়ে গেলাম, দেখি তিনি অঘোরে ঘুমাচ্ছেন। ফিরে আসতেই মনে হলো মেজো বোনের ডাক শুনলাম, গিয়ে দেখি সেও ঘুমাচ্ছে। এবার শুনলাম বাবার গলা। পরক্ষণেই মনে পড়ল বাবা তো দার্জিলিং এ ট্যুর করতে গেছেন।

       শীতের রাতে আমার তখন দর দর করে ঘাম ঝরছে। এতবার কানে ভুল শুনব? নাহ্ এটা স্বাভাবিক নয়। বুকের ভেতরটা শিরশির করছে। নিজের মনেই বললাম, “ভয় পেলে ক্ষতি। তাই সাহস রাখতে হবে।” শিবের মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রটা বারবার জপ করতে লাগলাম। কিন্তু ভয়টা যে কিছুতেই কাটছে না। নিজের ঘরে ফিরে শুয়ে পড়লাম। মশারি টাঙাইনি, কারণ বারবার উঠতে হতে পারে। হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার পায়ের কাছে বসল। লেপ দিয়ে মুখ ঢেকে ভাবলাম, “সবাই অসুস্থ, দরজা বন্ধ, গার্ড বাইরে—কে বসবে?” তবুও ভয়ে ভয়ের লেপটা একটু ফাঁক করে দেখি—একজন মহিলা! মাথায় ঘোমটা দেওয়া, আমার পায়ের কাছে বসে আমার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে। চোখে এক অদ্ভুত দৃষ্টি, যেন আমার ভেতরটা দেখে নিচ্ছে। ভয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম। 

        “ভয় পেলে ক্ষতি। আমি ভয় পাব না,” বারবার বলছি আর সাথে সাথে শিবের মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রটা বারবার জপ করছি। সাহস করে একবার লাথি মারলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু ঠেকল না। হঠাৎ মনে পড়ল, অশরীরী জিনিসের আকৃতি থাকে, অবয়ব থাকে না। হাত-পা হিম হয়ে আসছে। লেপটা আবারও ফাঁক করে দেখি, মহিলাটা তখনও হাসছে। আমার ঘরের জানালা সবসময় খোলা থাকে। শীতেও একটা জানালা খোলা ছিল। জানালা দিয়ে গাব গাছটা দেখা যায়। বারবার জানালার দিকে তাকাচ্ছি, যদি গার্ডদের দেখতে পাই। কিন্তু কেউ নেই। সময় যেন থেমে গেছে। হঠাৎ ফজরের আজানের শব্দ। সঙ্গে সঙ্গে মহিলা উঠে জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল। গাব গাছের সঙ্গে মিশে গেল যেন। আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাবছিলাম জানালার রড ভেদ করে যায় কীভাবে?

          উল্লেখ্য এলাকাটি ছিল মুসলমান এলাকা। তাই এখানে আজানের ধ্বনি কানে আসাটা স্বাভাবিক। মাঝখানে আমরাই কেবল হিন্দু। আশেপাশের লোকজন খুবই ভালো। মানে পরোপকারী। কোনো ধর্মীয় হিংসা নেই। বাবুর্চি কাকার সঙ্গে ভাব হয়েছিল। তাকে সব বলতাম। তিনি মাথা নেড়ে বলতেন, “হ্যাঁ, বাবুয়া, এসব এখানে ঘটে। এ বাংলোর পুরনো ইতিহাস আছে।” কিন্তু কী সেই ইতিহাস, তা কেউ খুলে বলত না।

      সকালে সবার আগে মাকে রাতের ঘটনা খুলে বললাম। মা সব শুনলেন। তারপর বেলা হলে আর্দালিকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন কোনো তান্ত্রিক পাওয়া যাবে কিনা। তখন আর্দালি বলল, তান্ত্রিক নেই তবে একজন ফকির বাবা আছেন, যিনি টাকা নেন না, কিন্তু সবার উপকার করেন। মা বললেন “ঠিক আছে এক্ষুনি আপনি উনাকে ডেকে আনুন।  

        কিছুক্ষণ পরে ফকির বাবা এলেন। মা সব খুলে বললেন। তিনি আমার কপালের দিকে তাকিয়ে আমার ঘরে গেলেন। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে গাব গাছটার দিকে অনেকক্ষণ তাকালেন। কিছু আমল করে গাছে আর জানালায় ফুঁ দিলেন। আমাকে বললেন, “এশার পর জানালা বন্ধ রাখবে, ফজরের নামাজের সময় খুলবে। কেউ টোকা দিলেও খুলবে না।” মাকে বললেন, “ওই গাছের নিচে একটা মেয়েকে খুন করে পুঁতে রাখা হয়েছিল। তার দেহ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। মেয়েটি ভয় পেলে ক্ষতি করত, কিন্তু আল্লাহর কালামের বরকতে তোমার বেটি রক্ষা পেয়েছে।” বাবা ফিরে এলে সব শুনে বললেন, “ফকির বাবা যা বলেছেন, তাই মেনে চলো।” 

       সেদিনের পর থেকে এশার পর জানালা বন্ধ রাখতাম। প্রতি রাতে জানালায় টোকা শুনতাম, কিন্তু খুলিনি। গলায় ঠান্ডা হাত, নিঃশ্বাসের শব্দ আর ঘটেনি। এতকিছুর পরেও ছাদে চাবুকের শব্দ আর মহিলার কান্না থামেনি।  

      এখন ২০১৯ সাল চলছে। এমএ পাশ করে চাকদহ কলেজে দীর্ঘদিন যাবত অধ্যাপনা করে সবে রিটায়ার করেছি। তবু সেই ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া বাংলোর সেই দিনের ঘটনা আজও ভুলতে পারিনি। ‘কী ছিল সেটা? চাবুকের শব্দটাই বা কার? কে ছিল সেই মহিলা? সত্যিই কি গাব গাছের নিচে কাউকে পুঁতে রাখা হয়েছিল?’ প্রশ্নগুলো আজও আমার অবচেতন মনে জাগে, ছটফট করে, কিন্তু উত্তর মেলে না, অজ্ঞাতই থেকে গেছে চিরকালের মতো। কারণ বড় হয়ে আর কোনোদিন ঐ বাংলোয় যায়নি।

_____________________


(P-08) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ০৮.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

ছোটগল্প

হাফ প্যাডেল 

বিপ্লব নসিপুরী


তন্ময় বলে “আমার পিকলুর মতো রডে বোতল দেওয়া সাইকেল চাইই চাই।” বছর দশের ছেলের এমন জেদের কথা শুনে মহাফাঁপড়ে পড়ে গেল অলোক। তবুও সে তাঁর ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল “আজ কাজ থেকে ফেরার পথে মালিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাল সাইকেল কিনে আনব।”

         ছেলে ঘুমাচ্ছে কিনা ভালো করে দেখে নিল শিলা। তারপর স্বামীর কাছে গিয়ে বললে “কী গো টাকা পেলে? আজ কিন্তু সারাদিন মন খারাপ করে বসেছিল, বারবার বলছিল তুমি কখন আসবে?” অলোক মৃদুস্বরে বললে “মালিক তো এক হাজারের বেশি দিতে পারব না বলল। এদিকে আমি খোঁজ নিয়েছি, ও যে-রকম বলছে তাতে ছয় হাজারের কমে হবে না।”

—তার মানে আরও পাঁচ হাজার। শোনো না, আমার কাছে এই কানের দুল জোড়া পড়ে আছে। কাল তুমি এটা বিক্রি করে ওর জন্যে সাইকেল আনিয়ো। জানো ওর বন্ধুরা সবাই ঐ সাইকেল চড়ে বেড়ায়। দেখে ওর খুব কষ্ট হয়।

—তোমার তো ঐ একটাই সোনা তাও বিক্রি করবে।

—ছেলেটাই তো বড়ো সোনা গো। তার তুলনায় এটা কিছুই নয়।

—(সকালে উঠে তন্ময় বললে) কালরাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি বাবা, শুনবে?

        অলোক উদাস হয়ে ভাবছিল সে কী করে তার স্ত্রীর শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করবে। বিয়ের পর একটা গয়নাও সে কিনে দিতে পারেনি। ছেলের কথায় সম্বিত পেয়ে অলোক বলল “হ্যাঁ হ্যাঁ, বল, আমি শুনছি।”

—জানো তো বাবা, স্বপ্নে দেখলাম আমি হিরো সাইকেল চড়ে এমাথা ওমাথা ঘুরে বেড়াচ্ছি। ঘুরতে ঘুরতে অনেক দূরে চলে গেছি। পথঘাট চিনতে পারছিলাম না। এদিকে আঁধার নেমে এল। আমার ভীষণ ভয় করতে লাগল। কাঁদতে লাগলাম। তখনই ঘুম ভেঙে গেল। বাবা আমার ওরকম সাইকেল চাই না। আমি তোমার সাইকেলটাই হাফ প্যাডেল করে চালাব। যাতে বেশি দূরে চলে যেতে না পারি। আর তোমাদেরকেও হারিয়ে যাতে না ফেলি।

       অলোক আর শিলা তন্ময়কে বুকে জড়িয়ে ধরল। তাদের খুশির অশ্রুবারি কিরণ স্পর্শে মুক্তোন্যায় গাল বেয়ে নামতে লাগল।

_____________________


(P-07) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ)
প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ০৭.
মাসিক সংখ্যা : ২৮ তম (হোলি দোলযাত্রা সংখ্যা)
প্রকাশনায় : আইমিক পাবলিশিং ভেঞ্চারাস 
সম্পাদনায় : আধৃতি আইমিক 
সহ-সম্পাদনায় : খ্যাতিশ্বর আইমিক
কভার ফটো/প্রচ্ছদ : একলব্য
_______________________

অণুকবিতা 

ফাগুনের ছোঁয়ায় 

ঋতম পাল


আকাশে আজ রঙের নেশা, 

ঋতুরাজের ঘটলো বুঝি আগমন;

কৃষ্ণচূড়ার ওই কোমল আভায়, 

মিললো দুটি প্রেমিক মন। 


চুপ কথার শহরে এসেছে বসন্ত, 

রঙে রঙে উঠলো সেজে তিলোত্তমা;

কোকিলের কুহুতানে মুগ্ধ চারিপাশ, 

ফাগুনের ছোঁয়ায় বিরহ যে আর সয় না।

_____________________


(P-26) Udit eMagazine (March) Web Version

উদিত মাসিক সংকলন (বাংলা ওয়েব সংস্করণ) প্রকাশকাল : এপ্রিল, ২০২৫ | পৃষ্ঠা সংখ্যা : ০৪. মাসিক সংখ্যা : ২৯ তম (হো সংখ্যা) প্রকাশনায় : আইমিক পা...